শুটকি মাছ বাঙালির রান্নাঘরের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর স্বাদ ও পুষ্টিগুণের কারণে এটি অনেকের প্রিয় খাবার হলেও কিছু মানুষ শুটকি মাছ খাওয়ার পর অ্যালার্জির সমস্যায় পড়েন। কিন্তু আসলে শুটকি মাছে কি এলার্জি আছে? বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন এ বিষয়ে? আসুন, বিস্তারিত জেনে নিই।
শুটকি মাছ কেন অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে?

শুটকি মাছ প্রক্রিয়াকরণের সময় বিভিন্ন সংরক্ষণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যা কিছু মানুষের শরীরে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিম্নলিখিত কারণগুলোর জন্য শুটকি মাছ খাওয়ার পর অ্যালার্জি হতে পারে:
- প্রোটিন সংবেদনশীলতা: শুটকি মাছে উচ্চমাত্রার প্রোটিন থাকে, যা কিছু মানুষের শরীরে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
- সংরক্ষণে ব্যবহৃত রাসায়নিক: অনেক সময় শুটকি মাছ সংরক্ষণের জন্য সালফাইট এবং অন্যান্য সংরক্ষণকারী রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, যা অ্যালার্জির কারণ হতে পারে।
- ফুড হিস্টামিন ইন্টলারেন্স: কিছু শুটকি মাছে প্রচুর পরিমাণে হিস্টামিন থাকে, যা হাইপারসেনসিটিভিটির জন্য দায়ী।
- ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ: অনিয়ন্ত্রিতভাবে শুকানো মাছের মধ্যে ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থাকতে পারে, যা ত্বক ও শ্বাসতন্ত্রের সমস্যার কারণ হতে পারে।
শুটকি মাছ খেলে যে অ্যালার্জির লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে
যদি কেউ শুটকি মাছ খেলে কি হয় এবং তাতে অ্যালার্জির সমস্যা থাকে, তাহলে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে:
- ত্বকে লালচে দাগ বা চুলকানি
- শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি
- পেটের সমস্যা (ডায়রিয়া, বমি, গ্যাস্ট্রিক)
- চোখ ও নাকে এলার্জির লক্ষণ (চোখ চুলকানো, পানি পড়া, হাঁচি ইত্যাদি)
- মারাত্মক ক্ষেত্রে অ্যানাফাইল্যাক্সিস (Anaphylaxis), যা জীবনঘাতী হতে পারে।
কীভাবে শুটকি মাছ খাওয়ার ফলে অ্যালার্জি এড়ানো যায়?
যদি আপনি শুটকি মাছ খেতে ভালোবাসেন কিন্তু অ্যালার্জির ঝুঁকি এড়াতে চান, তাহলে নিচের বিষয়গুলো মেনে চলুন:
- ভালোভাবে ধুয়ে রান্না করুন, যাতে সংরক্ষণে ব্যবহৃত রাসায়নিক দূর হয়।
- যদি সম্ভব হয়, রাসায়নিক ছাড়া প্রাকৃতিকভাবে শুকানো শুটকি মাছ কিনুন।
- অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- যারা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভোগেন, তাদের শুটকি মাছ থেকে দূরে থাকা উচিত।
শুটকি মাছের ক্ষতিকর দিক:

যদিও শুটকি মাছ অনেক স্বাস্থ্যগুণসম্পন্ন, তবে এটি কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। বিশেষ করে যারা অ্যালার্জির সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য শুটকি মাছের এই সমস্যা হতে পারে:
- সোডিয়ামের পরিমাণ বেশি: উচ্চমাত্রার লবণ থাকার কারণে এটি উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য ক্ষতিকর।
- ফুড পোয়জনিংয়ের ঝুঁকি: যদি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা না হয়, তবে এতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে।
- প্রসেসিংয়ে ব্যবহৃত রাসায়নিক: কিছু শুটকি মাছ সংরক্ষণের জন্য রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
উপসংহার:
শুটকি মাছ খাওয়া অনেকের জন্য সুস্বাদু ও পুষ্টিকর হতে পারে, তবে শুটকি মাছের ক্ষতিকর দিক এড়াতে সতর্ক থাকা জরুরি। যদি কারো শুটকি মাছে কি এলার্জি আছে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তাই শুটকি মাছ খাওয়ার আগে এর স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে জানা এবং সতর্কতা অবলম্বন করাই শ্রেয়।